sabina Trainer 2 years ago |
প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম অথবা ইয়োগা করুন
নারীর সুস্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে পরিবারের অন্য সদস্যদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য। নারীর স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা বা জটিলতা পুরুষদের থেকে অনেক সময় আলাদা। আবার পুরুষদের অনেক রোগ নারীদেরও একইভাবে আক্রান্ত করতে পারে, কিন্তু তাঁদের লক্ষণ ও চিকিৎসা সব সময় অভিন্ন না–ও হতে পারে।
আমাদের দেশে অনেক নারী ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, স্তন ক্যানসার, জরায়ুর ক্যানসার, যৌন ও প্রজননবিষয়ক রোগ, ঋতুস্রাবসংক্রান্ত জটিলতা, বিষাদগ্রস্ত, হরমোন সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগে থাকেন। কিন্তু অনেক সময় তাঁরা কারও সঙ্গে এসব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন না। যার ফলে এই সমস্যাগুলো দিনের পর দিন প্রকট আকার ধারণ করে।
নারীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু রোগ
১. হৃদ্রোগ: গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদ্রোগের কারণে নারীদের মধ্যে প্রতি চারজনের একজনের মৃত্যু হয়। যদিও জনসাধারণ হৃদ্রোগকে পুরুষদের সাধারণ সমস্যা বলে মনে করে। তবে সমস্যাটি পুরুষ ও নারীদের প্রায় সমানভাবে প্রভাবিত করে। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস—হৃদ্রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। অনেক সময় নারীদের হৃদ্রোগের উপসর্গ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। মেনোপজের পর নারীদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এ সময় সতর্ক হতে হবে।
বিশ্বব্যাপী স্তন ক্যানসার হলো নারীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান ক্যানসার
২. স্তন ক্যানসার: বিশ্বব্যাপী স্তন ক্যানসার হলো নারীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান ক্যানসার। প্রাথমিকভাবে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের স্তনে পিণ্ড হতে পারে। স্তনের কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। নিয়মিত নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা শিখতে হবে।
৩. ডিম্বাশয় ও জরায়ুমুখের ক্যানসার: জরায়ুর ক্যানসারের উৎপত্তি হয় নিচের জরায়ুতে এবং ডিম্বাশয়ের ক্যানসার ফ্যালোপিয়ান টিউবে। উপসর্গ হতে পারে তলপেটে ব্যথা, সহবাসের সময় স্রাব ও রক্তক্ষরণ। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি করা ঠিক নয়।
৪. স্ত্রীরোগসংক্রান্ত স্বাস্থ্য: রক্তপাত ও স্রাব মাসিকচক্রের একটি স্বাভাবিক অংশ। মাসিকের অস্বাভাবিক লক্ষণগুলো হলো—অতিরিক্ত রক্তপাত, তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব, অনিয়মিত মাসিক। যৌন সংক্রামিত রোগ (এসটিডি) আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ; সঠিক সময়ে নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা না করা হলে বন্ধ্যাত্ব, একটোপিক প্রেগনেন্সির মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
তৈলাক্ত ও অত্যধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলসহ পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন
৫. গর্ভাবস্থার সমস্যা: গর্ভাবস্থার সাধারণ সমস্যার পাশাপাশি লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা কমে যাওয়া; হাঁপানি, ডায়াবেটিস এবং বিষণ্নতা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর ক্ষতি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় অবশ্যই নিয়মিত অ্যান্টিনাটাল চেকআপে যেতে হবে। এ সময় রক্তের শর্করা, হিমোগ্লোবিন, থাইরয়েড ইত্যাদি পরীক্ষা করা দরকার হয়।
৬. অটোইমিউন রোগ: অটোইমিউন ডিজিজ দেখা দেয়, যখন শরীরের কোষগুলো সুস্থ কোষকে আক্রমণ করে। নানাবিধ অটো ইমিউন রোগে নারীরাই আক্রান্ত হন সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাতজনিত রোগগুলো।
নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায়
১. রুটিনমাফিক পরিমিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা। তৈলাক্ত ও অত্যধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলসহ পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
২. পরিমিত বিশ্রাম ও ঘুম দরকার। বেশি রাত না জেগে তাড়াতাড়ি বিছানায় চলে যাওয়া এবং খুব ভোরে দিন শুরু করলে শরীর ও মন দুটিই প্রাণবন্ত রাখা সম্ভব।
৩. প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘণ্টা হালকা ব্যায়াম অথবা ইয়োগা করুন। ভোরে কোনো পার্ক অথবা ঘরের ভেতরে হেঁটেও শরীর ফিট রাখা সম্ভব।
৪. ধূমপান বন্ধ করুন। আজকাল অনেক নারী ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ছেন, যা হতে পারে শারীরিক অসুস্থতার কারণ।
৫. ৪০ বছরের বেশি বয়সের নারীরা বছরে অন্তত একবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে নিতে পারেন শরীরের সার্বিক সুস্থতা। রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, রক্ত সল্পতার সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যা ধরা পড়তে পারে পরীক্ষার মাধ্যমে।
৬. শারীরিক সুস্থতার মতো মানসিক সুস্থতাও প্রয়োজন। মন ভালো রাখতে বই পড়তে পারেন, পরিবার–বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন, করতে পারেন ছাদবাগান, গান শুনতে পারেন, পথশিশু বা দুস্থ ব্যক্তিদের জন্য নিতে পারেন কোনো উদ্যোগ।
Alert message goes here